0
Home  ›  স্বাস্থ্য

আপনার ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে

আপনি কি ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার  সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন ? তাহলে আজকের পোস্ট টি শুধু আপনার জন্য। কারণ আজকে আমরা আলোচনা করবো শুধু নিউরোদ্রান্সমিটার ছিনতাই বিষয়ের ওপর। 

নিচে আপনাদের জন্য ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার ধাপে ধাপে লিখা হয়েছে।  এখান থেকে আপনারা খুব সহজেই ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার জানতে পারেন। 

ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার

ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার সম্পর্কে  শুরু করার আগে মনোযোগ দিয়ে পড়েন  । দেরি না করে চলেন ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার জেনেই নেই । চলুন দেখে নেয়া যাক ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার ।

আপনার ফোকাস আপনার একটি দুষ্প্রাপ্য সম্পদ। যে কারণে বিপণন ব্যবসায়ীরা আপনার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শত শত কোটি ডলার খরচ করতেও পিছপা হচ্ছে না। আপনাকে ধরে রাখতে অসংখ্য এ্যাপ সেভাবেই ডিজাইন করা হচ্ছে। ইউটিউব, ফেসবুক, ইস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো জানে আপনি যত সময় তাদের বেশি টাকা তারা আয় করতে পারবে। আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন বেড়ে গেলে কি হয়। 

বস্তুত, তাদের সবচেয়ে আধুনিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নোটিফিকেশনের ব্যবহার ভেবে দেখুন তো কতবার আপনি শুধু আপনার মোবাইল স্ক্রিনে নোটিফিকেশন ভেসে উঠতে

দেখে কোনো একটা গ্র্যাপ খুলেছেন? এবং অবচেতনভাবে আপনি কত সময় নষ্ট করেছেন? এটি যদি বছরে শত শত ঘণ্টার বেশিও হয় তাও আমি অবাক হব না। আর ধন্যবাদ দেই সেইসব অত্যাধুনিক এ্যালগরিদম (গাণিতিক যুক্তি) যা ব্যবহার করে কোম্পানিগুলো আমাদেরকে আগের চেয়ে আরো ভালোভাবে ধরে রেখেছে। যে কোনো স্বাভাবিক বইয়ের দোকান এর চেয়ে আ্যামাজন এর বই সুপারিশ করার পদ্ধতি বেশি নিখুঁত এবং বিস্তৃত।  আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন কমে গেলে কি হয়। 

আপনার ফেসবুকের নিউজফিডে যান, কিছু একই বিষয়ের উপর ভিডিও দেখুন এবং দেখুন পরে কী হয়? আমি একদিন বাস্কেটবলের উপর একটা ভিডিও দেখেছিলাম, সাথে সাথেই আমি আরেকটা ভিডিও দেখার সুপারিশ পেলাম সেটাও দেখে ফেললাম। তারপরে আরেকটা দেখলাম এভাবে চলতেই থাকল।

এখন এই অত্যাধুনিক আ্যালগরিদম তৈরির কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। ইতিবাচকভাবে বললে, আপনি আসলে কী দেখতে চান তা খুঁজে বের করা সহজ। নেতিবাচকভাবে বললে, এটা আপনাকে কখনো শেষ না হওয়া লুপ বা প্যাচের মাঝে ফেলে দেয় ফলে একটার পর আরেকটা ভিডিও দেখতে থাকেন। এ অর্থে, তথ্য খোঁজা বা ভালোবাসার মানুষদের সাথে আপনাকে ব্যবহার করতে থাকে৷ এর মাধ্যমে এটা আপনার বানায়। পরিণামে, আপনার মাঝে ভর করে অস্থিরতা ৷আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন বৃদ্ধির ঔষধ। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এই নোটিফিকেশন ৷ যখন আপনি কোনো নোটিফিকেশন দেখেন, কোনো পুরস্কার পাবার আশার মতো আপনি সেটা খতিয়ে দেখতে যান আর ক্লিক করেন। এই ব্যাপারটা আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ ঘটায় । যাই হোক এটা আপনাকে আনন্দিত করে না বা রাখবেন, ডোপামিন কোনো আনন্দ রসায়ন নয়৷ এটা কেবল একটা নিউরোট্রাল্মিটার। যখন কেউ কোনো আনন্দ পাবার আশায় বসে থাকে তখন এটা কার্যকর হয় এবং এই আনন্দ সাময়িক নিচে আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো যেখানে আপনি দেখবেন আপনার এই নিউরোট্রান্সমিটারকে ছিনতাই করা হচ্ছে।আরো জানতে পড়ুন মস্তিষ্কের ডোপামিন তৈরির কোষগুলো নষ্ট হলে কি রোগ হয়। 

যখন আপনি আপনার মেইল চেক করেন আপনার একটা পুরস্কার পাবার মতো অনুভূতি জন্মায় ৷ আপনি আশায় থাকেন কোনো আনন্দের সংবাদের অথবা কোন বন্ধুর কাছে থেকে কোনো মেসেজের ৷

যখন আপনি কোনো পরিসংখ্যান দেখেন

কোনো ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও, কোনো ওয়েবসাইট ট্রাফিক পরিসংখ্যান, আপনি আশা করতে থাকেন দারুণ কোনো সংখ্যা দেখতে পাবেন। এই অনিশ্চয়তার ব্যাপারটা আপনার কাছে উত্তেজনাকর মনে হয়।

যখন আপনি ইউটিউব দেখেন আপনি আশা করেন মজার কোনো ভিডিও দেখবেন । যখন আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখেন ফেসবুক, টুইটার, ইস্সটাগ্রামের মাঝে আপনি আশা করেন কোনো পুরস্কারের মতো অনুভূতি দেয় এমন কিছু যেমন আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট, আপনার কোনো বন্ধুর কাছে থেকে কোনো মেসেজ অথবা মজার কোনো বিষয়ের ।

উপরের কোনো একটা কাজে যদি আপনি নিমজ্জ থাকেন থাকেন। পরিণামে আপনি মনোযোগ বা ফোকাস করার ক্ষমতা হারাতে থাকেন। যারা কিছুদিন ইন্টারনেট বা সোশাল মিডিয়া থেকে সরে থাকতে পারে তারা বুঝতে পারেন এসব কী পরিমাণ সময় নষ্ট করে বা ফোকাস নষ্ট করে। আপনার কী মনে হয়? আপনি কীভাবে নিজের ডোপামিন নিউরোট্রাঙমিটারকে ছিনতাই হতে দিচ্ছেন?আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন কাকে বলে। 

খাবারের ক্ষুধা

খাবারের সন্ধানে শিকার করতে বের হওয়া আমাদের তৎপর পাশাপাশি খাবারকে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া আমাদেরকে কাজ করতে উৎসাহিত করত পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং বিশেষ করে চিনিযুক্ত খাবার আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়।

পটসড্যাম, জার্মানির ইন্সটিটিউট অব হিউম্যান নিউট্রশন এর অধ্যাপক সুশানে ক্লজের মতো মিষ্টি খাবারের প্রতি আমাদের এই আকর্ষণ একেবারেই সহজাত। চিনি ক্রায়। তিনি লিখেছেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি ও ফ্যাটের সমন্বয় মস্তিষ্কের পুরস্কার জনিত কার্যক্রমকে উদ্দীপ্ত করে তোলে ।”

কাজেই আমরা যে প্রতিদিনের সুগার ও ফ্যাট খাবার গ্রহণ করতে পছন্দ করি এটা অবাক করার মতো কিছু না, তাই নয় কি? করি। 

যদিও আমাদের এখনও খাদ্যের দরকার, কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষেরা খাবারের সন্ধানে বের হবার জন্য যে তাগিদ অনুভব করত এখন তা অবাস্তর। আমরা খুব সহজেই আমাদের পাশের সুপারমার্কেট বা বাজার থেকে যা দরকার তা নিতে পারি। এটার জন্য খুব বেশি পরিশ্রমের দরকার পড়ে না। আমাদের অধিকাংশের জন্যই যথেষ্ট খাবার

রয়েছে। কিন্তু আমাদের জৈবিক নিয়ম পূর্ব পুরুষদের মতো রয়ে গেছে। সমৃদ্ধ কোনো খাবার সামনে দেখলে এই খাবার পুরস্কার হিসেবে পাবার আনন্দ বা প্রত্যাশা আমাদের মাঝে জেগে ওঠে ।

ঠিক এখানটাতেই ফুড ইন্ডাস্ট্রি বা খাদ্য শিল্প এগিয়ে আসে। এই শিল্পে বিপণনকারীরা দেদারছে খরচ করে যেন আমর তাদের পণ্য কিনি। তারা এটা আবিষ্কার করে বের করেছে, যে কোনো খাবারে চিনি মেশালে তা খাবারকে সুস্বাদু করার পাশাপাশি আকর্ষণ জাগাতে সক্ষম। এ কারণে যে কোনো প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপাদান দেখলে আপনি সেখানে চিনির উপস্থিতি খুঁজে পাবেন।আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধির উপায়। 


যাই হোক, চিনি কতটুকু আসক্তিকর এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। আপনি কোথাও পড়তে পারেন এটা কোকনের মতো আসক্তিকর, আসলে তেমনটা নয়।

সানফ্কানসিসকো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর শিশু বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট লাস্টিং জানান, চিনি আসক্তিকর কিন্তু এটা বড়জোর নিকোটিনের সমান, হিরোইনের মতো ন্য়।

মস্তিষ্কের পুরস্কার সিস্টেম আর যে সার্কিট আমাদের খাদ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে সেটা মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে কাজ করে। কিন্তু চিনির বদলে মাদক এই সিস্টেমটা ছিনতাই করে আর স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে দেয়।আরো জানতে পড়ুন সিগারেট খেলে কি ডোপামিন হরমোন বাড়ে। 

হস কলেজ লন্ডন এর পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক টম স্যান্ডার্স জানান চিনি মাদকের মতো আসক্তিকর এটা অযৌক্তিক ৷ তিনি আরও বলেন, এটা সত্য যে মিষ্টিজাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে কিন্তু এটা কোকেন বা আফিমের মতো আসক্তিকর না। যখন কেউ চিনি বন্ধ করে তখন এসব ড্রাগ বন্ধ করলে যে লক্ষণ দেখা যায় তেমনটা ঘটে না।

উপসংহারে বলা যায় চিনি ও চর্বির প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত ও স্বাভাবিক । আমরা এটার প্রতি আসক্ত না হলেও নিজের তাগিদেই এসব বিশেষ করে চিনির উপর নির্ভরশীলতা কমানো দরকার । ডোপামিন ও এর সার্বক্ষণিক উদ্দীপনা আপনার দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা করার ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে।

গবেষণায় দেখা যায় সাফল্য নিয়ে যারা ভবিষ্যদ্বাণী করতে ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে দেখতে চায় বারবার এই ব্যাপারটাকে ফোকাস করে, তারা বর্তমানেই ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের প্রবণতা থাকে অন্যদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের, প্রোডাক্টিড কাজ করার এবং টাকা সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ৷

সাফল্য নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শেষে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এডওয়ার্ড সিদ্ধান্তে আসেন “অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত সাফল্যের সবচেয়ে গুরুতৃপূর্ণ নির্ধারক হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গি” তিনি এই 'দীর্ঘস্থায়ী'কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেন যে এটা একটা ব্যক্তির সামর্থ্য যে গ্রহণ করতে পারে।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার আজকের যুগে দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যের জন্য মনোযোগী হওয়া কোনো সহজ কৃতিতৃ নয়। অনেক বাহ্যিক ব্যাপার আছে যা আমাদের স্বল্প সময়ে চিন্তার জন্য বাধ্য করে এবং অল্পতেই পরিতৃপ্ত করে ফেলে । যদিও আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে তবুও আমরা ব্যর্থ হই। যেমন_

  • আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে জানা সড়েও অনিয়ন্ত্রিতভাবে আমরা মিষ্টি অথবা চিনিযুক্ত পানীয় খেয়ে ফেলি ।
  • আমাদের পড়তে হবে জানা সত্তেও আমরা আরেকটানে্টফ্লিসক্সের সিরিজ দেখার নামে গড়িমসি করি।
  • আমরা জানি এক্সারসাইজ করলে আমাদের কী উপকার হবে, এর বদলে আমরা বসে থাকতে অথবা সোশাল মিডিয়াতে বন্ধুর সাথে চ্যাট করি।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সোশাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট সামগ্রিকভাবে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা করার ক্ষমতা ও আমাদের সামনে থাকা কাজের উপর ফোকাস করার যে ক্ষমতা উভয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটা বিস্ময়কর নয় যে, আ্যাপেল এর সিইও স্টিভ জবস তার বাচ্চাদেরকে ফোন বা দ্যাবলেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন । যদিও তার ব্যবসা ছিল লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছে এসব জিনিস বিক্রয় করা৷

ফেসবুকের সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, কোটিপতি মস্তিষ্ক নতুন করে দীর্থস্থায়ী চিন্তায় ফোকাস আনার জন্য অভ্যস্থ করতে হবে। এটার জন্য প্রথমেই আমাদের ফোন থেকে সোশাল মিডিয়ার আ্যাপ মুছে ফেলতে হবে। তার ভাষায় এইসব আ্যাপ আমাদের মাথাকে অনেক দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য অভ্যস্থ করে ফেলে ৷ লাইক, কমেন্ট, মেসেজের রিপ্লাই এসবের মতো সার্বক্ষণিক ফিডব্যাক পেতে পেতে আমরা আশা করি আমরা যেটাই করি না কেন তার দ্রুত ফল পাব।

 এই অনুভূতির কারণে “দ্রুত ধনী হউন” এর মতো বিজ্ঞাপনগুলো আমাদেরকে চাঙ্গা করে তোলে আর সচেতনভাবেই আমরা এর পক্ষপাত কাঁর। (যেমনঃ আমরা শুধু ধনীদের কথা শুনি, সবচেয়ে সফল ইউটিউবার এর কথা শুনি কিন্তু যে ব্যর্থ হয়েছে তার কথা শুনি নাম বেশি বেশি স্টিমুলেশন এর চাহিদার কারণে আমাদের ফোকাস স্বল্প সময়ের জন্য প্রস্তুত হয়, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও বিকৃতি ঘটে । এসব কারনে আমাদের একটা ভুল মানসিক কাঠামো দীঁড়ায় যেমন

  • সাফল্য সহজে আরও দ্রুত আসা উচিত
  • আমার টাকা কামাতে অথবা ওজন কমাতে কঠোর

আদতে এসব ভ্রান্ত ধারণা আমাদের বাস্তব দর্শন ও সময়ের দৃষ্টিভঙ্গি নষ্ট করে। রাতারাতি সাফল্য পাওয়া মানুষদের দেখে আমাদের হিংসা হতে পারে। বিখ্যাত ইউটিউবারদের উপর আমাদের বিরক্তি ধরে যেতে পারে । আমরা নিজেদেরকে সামর্থ্যকে অপর্যাপ্ত ভাবতে শুরু করি । এসব আমাদেরকে ভাবায় হয়তো আমি যথেষ্ট ভালো নই, স্মার্ট নই, শৃঙ্খলাবদ্ধ নই। আমরা ভাবি এই ঘাটতি পুরণের জন্য আমাকে আরো তাড়াহুড়া করতে হবে৷ না হলে আমি সুযোগ হারাব। আমাকে সেই গোপন রহস্য খুঁজে বের করতে হবে যা আমাকে সফল বানাবে। আর এই উগ্র প্রতিযোগিতায় আমরা সবচেয়ে গুরুতৃপূর্ণ জিনিস ভুলে যাইঃ ধৈর্য ।আরো জানতে পড়ুন ডোপামিন হরমোন কখন নিঃসৃত হয়। 

সারাদিন মোটিভেশন ভিডিও দেখা আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করবে না। কিন্তু প্রতিদিন একটু একটু করে করা কাজ আপনাকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবে৷ শান্ত থেকে আপনার সামনে যে কাজ আছে এটার উপর ফোকাস করুন আপনি লক্ষ্যে যেতে পারবেন ।

ব্যাপার হচ্ছে, আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনের দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের জন্য অবশ্যই আপনার মনোযোগের উপর জিনিসে ফোকাস করার জন্য ব্যবহার করা শিখতে হবে।  এটা করার জন্য অতি উচ্চমাত্রার উদ্দীপক কাজকর্ম থেকে আপনার দূরে সরে থাকতে হবে৷ 

এখানে দীর্ঘস্থায়ী চিন্তার একটা আদর্শ চিত্র দেখাচ্ছি তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানিটির নাম আ্যামাজন ৷ এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে কিন্তু প্রথমবারের মতো লাভজনক বছর হবার জন্য এটিকে অপেক্ষা করতে হয় ২০০৩ সাল পর্যন্ত । এই বছর আ্যামাজন এর মোট লাভ হয় ৩৫ মিলিয়ন ডলার। ঠিক আগের বছর যেটি লোকসান করেছিল ১৪৯ মিলিয়ন ডলার ।

এখন এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বোজেস হয়তো আগেই লাভ করতে পারতেন । কিন্তু এর পরিবর্তে তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে পর দশক এটি টিকে থাকে । আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে এমন কাজ করতে আমি উৎসাহ দিতে চাই । সাফল্যের ভিত্তিতে একটার পর একটা ইট গাঁথুন। এমনভাবে ভিত বানান যেন কোনো বাঁধা বা বিপত্তিতে এটা ধসে না পড়ে ৷

মনে রাখবেন, দীর্ঘস্থায়ী চিন্তা ভাবনাই আপনার লক্ষ্য অর্জনের গোপন রহস্য। সাফল্য আজ অথবা কালকেই আসবে না। আপনাকে ধৈর্য ধরার সেই সাথে ধারাবাহিক হবার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। এটার জন্য যেসব হবে। দীর্ঘস্থায়ী কোনো সম্ভাবনার চিত্র মনে আঁকতে যেসব বাহ্যিক উদ্দীপনা আপনার ফোকাস সরিয়ে দেয় সেসব সরিয়ে ফেলুন ৷ এরপর দেখবেন আপনি আগামী বছরগুলোয় নিজেকে যেমন দেখতে চান তা পাবার সম্ভাবনা কয়েক গুণবেড়ে যাবে।

মোদ্দা কথা, আজকের সমাজ অনেক দিক থেকেই এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন আপনার ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটারকে ছিনতাই করতে পারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ডিজাইন আপনার ভালোর জন্য করা হয়নি বরং যতরকম কার্যকরভাবে আপনার মানিব্যাগ খালি করা যায় সেভাবে সব ডিজাইন করা হয়েছে।

যাই হোক, গুরতৃপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এটা নাটকীয়ভাবে আপনার মস্তিষ্কের ফোকাস করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আপনাকে অস্িরচিত্ত করে নিজের সম্পর্কে খারাপ লাগা কাজ করায় । আপনার জীবন ও এর আশেপাশের মানুষদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলার কাজটি এই অতি উদ্দীপক জিনিসগুলো কঠিনতর করে ফেলে ।

আ্যাকশন স্টেপ

আ্যাকশন গাইড ব্যবহার করে নিচের কাজগুলো যত সুনির্দিষ্টভাবে করা যায়, করে ফেলুন আমার মস্তিষ্কে ছিনতাই ঘটে যখন আপনি অতিরিক্ত উদ্দীপনার মাঝে থাকেন-

গড়িমসি করার অনেক কারণ থাকলেও সবেচয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি অতিরিক্ত উদ্দীপনা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় ।

শান্ত ও ফোকাস থাকলে আপনার জন্য মূলকাজ করা অনেক সহজ হয়ে যায় । আপনার আসল লক্ষ্যের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া আপনাকে উদ্বেলিত করতে পারে কিন্তু আপনি শান্ত ও ফোকাস না থাকলে সমস্যা দানা বাধতে থাকে।

 সারাদিন আপনি তাড়াহুড়া করতে থাকেন, একটা কাজ থেকে আরেকটা কাজ করতে থাকেন। একটা হুইলের মাঝে ইদুর যেভাবে দৌড়াতে থাকে আপনিও তেমন করতে থাকেন। আপনি আপনার কাজ শেষ করতে পারেন না। বিভিন্ন বীধা আপনার ফোকাস নষ্ট করতে থাকে। আপনি ইমেইল দেখে, সোশাল মিডিয়া দেখে অথবা শিক্ষামূলক ভিডিও দেখে দেখে সময় নষ্ট করতে থাকেন ।

এর শুরু হয়, আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আপনার ফোন হাতে নেবার সময় থেকে। এরপর এটা অগ্রসর হয় আপনি ইমেইল দেখতে থাকেন৷ কিন্তু সেটা সেখানেই থামে না। এরপর অল্প সময়ের জন্য আপনি সোশাল মিডিয়া থেকে ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নেন । এর মাঝেই ইমেল, নোটিফিকেশন, লাইক এসব আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ ঘটাতে থাকে আপনি উদ্দীপ্ত হতে থাকেন।

এখন আপনি আপনার স্টিমুলেশন এর ডোজ পেয়ে গেছেন, আপনি কাজ শুরু করতে পারেন তাই তো? কিন্তু এরপর কী হয় যখন আপনি আপনার ডেস্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে বসেন? এটা কি আপনি সহজে করতে পারেন নাকি কাজ ছাড়া আপনার সব কিছুই ভালো লাগতে থাকে? আদতে আপনি নিজেকে বলতে থাকেন এই কাজটা আপনি কিছু পরে করলেও পারবেন। 

হয়তো আপনার আরেক কাপ কফি খেতে ইচ্ছে করবে অথবা ইমেলের জবাব দেবার কথা মনে হবে। আপনার মনে হবে, কাজ অপেক্ষা করুক । ফলে আপনি ইঁদুরের হ্যামস্টার হুইলে চড়ে বসবেন, আরো আরো স্টিমুলেশন পাবেন যেটা ঘণ্টা এমনকি দিনব্যাপী চলতে পারে। উপরের ঘটনার সাথে নিজেকে মেলাতে পারছেন কি?

অতিরিক্ত স্টিমুলেশনজনিত সমস্যা 

যখন আপনি স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনাময় কাজ করতে থাকবেন, আপনার বেইন আরো আরো স্টিমুলেশন চাইবে । আপনার স্টিমুলেশন লেভেল যত বাড়বে আপনার স্বাভাবিক কাজ তত নিরস ও বিরক্তিকর মনে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকবেন কেন বইয়ের কাজ করব, কেন রিপোর্ট লিখব অথবা মার্কেটিং প্ল্যান করব যেখানে আমি এর চেয়ে অনেক অনেক মজার কাজ করতে পারি।

আপনার বর্তমান উচ্চ মাত্রার স্টিমুলেশন ও আপনার কাজের কম মাত্রার স্টিমুলেশন এর এই ফারাকই আপানার মধ্যে গড়িমসি ভাব আনবে ৷ চিত্রটা এরূপ হবে-

ধরুন আপনি একটা ভিন্ন তরঙ্গদৈঘোরের স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনায় আছেন, আপনার আসল কাজ করার জন্য যে স্টিমুলেশন দরকার সেটার সাথে এটা সমাপতিত নয় ।

যেমন একজন লেখক হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে লেখালেখি করা। কিন্তু আমি যত দ্রুত আমার ইমেল দেখা, ইউটিউবে ঢোকা অথবা কতটা বিক্রি হচ্ছে এসব দেখা শুরু করি, বিক্ষিপ্ততার এমন এক সূর্ণিজালে পড়ে যাই যে সেখান থেকে পালাতে পারি না। আমার স্টিমুলেশন এর মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে লেখালেখি আমার জন্য নিরস ও কল্পনাতীত চ্যালেঞ্জিং কাজ হয়ে যায়।

এখন মূল প্রশ্ন আমরা কী করতে পারি? কীভাবে এটার জন্য উত্তেজনা কাজ করবে? এটা আমরা পরবর্তী সেশনে বলতে যাচ্ছি

  • আ্যাকশন স্টেপ

যেসব আপনার মাঝে অতিরিক্ত স্টিমুলেশন ঘটায় তা লিখে ফেলুন। যেমন এটা হতে পারে ফেসবুক দেখা, নিউজফিডে ভিডিও দেখা, ইমেল চেক করা অথবা পত্রিকা পড়া ।

  • স্টিমুলেশন ফাঁদ 

আপনি অতিরিক্ত স্টিমুলেশন এর বলয়ে ঢোকামাত্র আপনার মন আপনার সাথে কৌশলে প্রলুব্ধ করতে চাইবে এই খাদের মাঝে আটকে রাখতে । এর বদলে আরো আরো স্টিমুলেশন পাবার জন্য অন্যকিছু খুঁজবে। সর্বোপরি আমাদের তো জীবন উপভোগ করতে হবে তাই না? এই সেকশনে চলুন দেখে আসা যাক কোন চারটি কৌশলে মস্তিষ্ক আপনাকে অতিরিক্ত স্টিমুলেশনে রাখতে চায়।

কৌশল ১

কাজে ফেরা সহজ মন আপনার সাথে প্রথম যে কৌশল অবলম্বন করে তা হচ্ছে আপনাকে মনে করায় কাজে ফেরা সহজ জিনিস। এটা সত্য থেকে দূরে না হলেও বেশিরভাগ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনি কাজে ফিরতে পারেন না। দেখা যায় আপনি আপনার আসল কাজকে পরদিনের জন্য রেখে দেন ।

সোদ্মা কথা, একবার অতিরিক্ত স্টিমুলেশন এসে গেলে কাজে ফেরা কঠিন। আমি অগণিতবার নিজেকে বলেছি আমি পরে লেখা শুরু করব। এটা কখনই হতো না। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আছে আর চাইলেই আপনি কাজে ফিরতে পারবেন তাহলে আরেকবার ভাবুন।

কৌশল ২

আপনি এটা পরে করতে পারবেন ,আপনাকে কোনো কাজ পরেও করতে পারবেন এটা বলা। এটা আপনাকে বলবে বিকেলে চোরা অনেক সময় আছে অথবা আগামীকালও তুমি এটা করতে পার অথবা আগামী সপ্তাহ অথবা আগামী মাস।

যাই হোক, আপনি যদি প্রতিহত না করতে পারেন কাজ পেছানো অভ্যাসে পরিণত হবে। ৫ বছর পর লক্ষ্য অর্জনে যখন পিছিয়ে যাবেন, নিজের উপর রাগ হবে।

কৌশল ৩

উত্তেজনা ও পরিপূর্ণতা একই জিনিস নয় আপনি যখন উদ্দীপক কাজে ব্যস্ত থাকবেন আপনার মন হিসাব করতে থাকবে আপনি কতটুকু মজা পাচ্ছেন । আপনার মনে হবে এটা আরও করা দরকার ৷ এখন অন্যকিছু ভাবার দরকার নেই । শুধু উপভোগ কর ৷ এটাই আপনার মনে হতে থাকবে।

কিন্তু আপনার মন যাই বলুক না কেন, উত্তেজনা ও পরিপূর্ণতা একই জিনিস নয়। যখন আপনার উদ্দীপনা কমে আসবে নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন । ইউটিউব ভিডিও দেখে, ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল উপকৃত হচ্ছি?

আমি কি অর্থপূর্ণ উপায়ে আমার সময় ব্যয় করছি? এসব কি আমার জীবনমান বাড়াতে পারছে কিনা? মনে রাখবেন, উত্তেজনা ও পরিপূর্ণতা একই জিনিস নয়। উত্তেজনা মজাদার হতে পারে। কিন্তু এটা নিশ্চিত করুন যেন আপনার অভ্যন্তরীণ শান্তি বৃদ্ধি পায় ও আপনার মনোযোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটা জীবনের দীর্ঘ যাত্রায় আপনাকে পরিপূর্ণতা ্দিতে পারে। যদি আপনি আপনার সময় কার্যকর ও অর্থপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করা শিখতে চান আমার লেখা পড়ুন।

কৌশল ৪

আপনি হাতছাড়া করছেন ৩০ মিনিট পরপর ইমেইল দেখা বা নিউজ পড়ার কারণে আপনার মাঝে একটা ভ্রান্ত ধারণা জন্মাচ্ছে যে আশেপাশের পরিবেশের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে।

আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল অথবা ব্রেকিং নিউজ হাতছাড়া হতে দিতে চান না, তাই তো? কিন্তু আপনার আসলেই কি সব মেইলের রিপ্লাই দেওয়া দরকার পড়ে? অথবা প্রতিদিনই কি আপনার সাম্প্রতিক খবর দেখা দরকার হয়? এই ধরনের চিন্তা জন্ম নেয় আসলে আমি কিছু মিস করছি নাতো এই ভয় থেকে। এই ভয় আসলে আসে আপনার সংকীর্ণ চিত্তাধারা থেকে । 

যেমন আপনার সকল সুযোগই লুফে নেওয়া দরকার তাই তো? কিন্তু সুযোগ সবখানেই আছে। ভবিষ্যতে আরো থাকতে পারে। তথাপি আপনি একটা খবর মিস করে গেলেন, একটা ইভেন্টে যেতে পারলেন না, অথবা আপনার ইউটিউবারের সর্বশেষ লাইভ ভিডিও মিস করে গেলেন স্বাভাবিক । নিশ্চিতভাবে আমি আপনার বাচ্চার জন অথবা বোনের বিয়ে মিস করাকে উৎসাহ দিতে পারি না কিন্তু অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে এসব আসলে যায় আসে না চিনি না তাদের ফোন ধরি না এবং আমি কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ইভেন্ট মিস করলে চিন্তিত হই না কারণ আমি জানি পাব।

আপনার কী অবস্থা? আপনি কি হাতছাড়া হবার ভয়ে ভীতু? দিনের কোনো সময় আপনি যদি এ ধরনের ফীদে পড়ে যান, নোট করুন। সচেতনতা আপনার স্টিমুলেশন এর মাত্রা কমিয়ে আপনাকে মনোযোগী ও ফোকাস হতে সাহায্য করবে, আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকবেন।

আ্যাকশন স্টেপ আ্যাকশন গাইড ব্যবহার করে ১-১০ স্কেলে নিচের কৌশলগুলোর জন্য নিজেকে রেট করুন। (১ মানে আপনি ফীদে পড়ছেন না আর ১০ মানে এটা আপনার পরিস্থিতির সাথে পুরোপুরিভাবে যায়)

কৌশল : ১
আমার মন আমাকে বোঝায় যে কাজে ফিরে যাওয়া সহজ ।

কৌশল :২
আমার মন আমাকে বলে আমি পরে করতে পারব ।

কৌশল : ৩

আমার মন আমাকে বিশ্বাস করায় যে উত্তেজনা ও পরিপূর্ণতা
লাভ একই ।

কৌশল : ৪

আমার মন আমাকে বলে সুযোগ খুবই সীমিত ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Search
Menu
Theme
Share
Additional JS